
প্রাকৃতিকভাবেই দেশের অন্যতম পর্যটনসমৃদ্ধ এলাকা সিলেট। যাতায়াত, তথ্য সংগ্রহ-সরবরাহ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেই সিলেটের পর্যটন খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হতে পারে। এরই মধ্যে সিলেটের পর্যটন উন্নয়নের জন্য দাবি জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতারা।
সিলেটকে বলা হয় ৩৬০ আউলিয়ার শহর। একইভাবে বলা হয় চায়ের দেশ। দৃষ্টিনন্দিত চা বাগান, উঁচু সবুজ পাহাড়, বিশাল-হাওর, নলখাগড়ার বন আর সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা চেনা-অচেনা পাখির ঝাঁক দেখার জন্য প্রতিদিন হাজার-হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে বৃহত্তর সিলেটে। সিলেটের সুনামগঞ্জকে বলা হয় হাওর-বাঁওড়ের দেশ, আউল-বাউলের দেশ। সিলেট শহরে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ হজরত শাহজালাল (র.) ও হজরত শাহপরান (র.) এর মাজার।শহরের পাশেই রয়েছে বিভিন্ন চা বাগান। চা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশের ১৬৪টি চা বাগানের মধ্যে ১৩৫টি চা বাগানই সিলেটে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯৩, হবিগঞ্জে ২২ ও সিলেটে ২০টি চা বাগান। শহরের অত্যন্ত কাছের চা বাগান লাক্কাতুড়া ন্যাশনাল টি গার্ডেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৪১৪টি হাওরের মধ্যে বৃহত্তর সিলেটেই রয়েছে ১৪২টি। এর মধ্যেসুনামগেঞ্জ ১৩২, সিলেটে ৪৩, হবিগঞ্জে ৩০ ও মৌলভীবাজারে তিনটি হাওর রয়েছে।বাংলাদেশের প্রথম রামসার স্থান সুন্দরবন আর দ্বিতীয় রামসার স্থান ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বাংলাদশের বৃহত্তম ও দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি সিলেটের সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর।
স্থানীয় লোকজনের কাছে হাওরটি ‘নয় কুড়িকান্দার ছয় কুড়ি বিল’ নামে পরিচিত। এ হাওরে রয়েছে বিভিন্ন মাছ, বৃক্ষ ওপাখি। শীতের ঋতুতে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আসা নাম না জানা পাখির ঝাঁক এসেনামে এ হাওরে। এখানে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিরল প্রজাতির প্যালাসেস ঈগল, বড় আকারের গ্রে কিংস্টর্ক রয়েছে এহাওরে। স্থানীয় জাতের মধ্যে পানকৌড়ি, কালেম, বৈদর, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খচিল, জলকুক্কুট ইত্যাদি পাখির নিয়মিত বিচরণ এ হাওরে। হাওরের নল-খাগড়ার বন, অথৈই জলে দাঁড়িয়ে থাকা হিজল-করচ বৃক্ষ পর্যটকদের বিশষভাবে আকৃষ্ট করে।
সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় জাফলং অবস্থিত। এর অপর পাশে ভারতের ডাওকি অঞ্চল। ডাওকি অঞ্চলের পাহাড় থেকে ডাওকিনদী জাফলং হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখানে প্রচুর পাথর পাওয়া যায় বলে কোম্পানীগঞ্জ-জাফলং-ভোলাগঞ্জকে পাথর সাম্রাজ্য বলা হয়। এ এলাকায় সাধারণ বাঙালিদের পাশাপাশি বাস করেন উপজাতিরাও। এখানে রয়েছে পাঁচটি খাসিয়া পুঞ্জি।সিলেট শহর থেকে মাত্র ৬২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ পর্যটন স্পট। ঢাকা থেকে জাফলংয়ে বেড়াতে যাওয়া পর্যটক ফিরোজ ও তার স্ত্রী সুষ্মি জানান, সিলেট থেকে জাফলংয়ে যাওয়ার পথে সারি নদীর নীল জল তাদের ভীষণ আকৃষ্ট করেছে। জাফলংয়ের বাংলাদেশ সীমান্তে দাঁড়ালে ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে থাকা উঁচু পাহাড় দেখা যায়। এসব পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝরনা সত্যি খুব আকর্ষণীয় । ভারতের ডাউকি বন্দরের ঝুলন্ত সেতুও আকর্ষণ করে অনেককে। এছাড়া সর্পিলাকারে বয়ে চলা ডাওকি নদীও টানে পর্যটকদের। ডাওকি নদীর পানির স্বচ্ছতাও জাফলংয়ের অন্যতম আকর্ষণ।তাছাড়া পাহাড়ের মাথায় মেঘের দৃশ্যও অত্যন্ত মনোরম।
পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের মধ্যে রয়েছে সিলেটের মৌলভীবাজারের মাধবকু-, হামহাম ও হবিগঞ্জের সাতছড়িসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। কিন্তু এসব স্থানে পর্যটকদের নানা বিড়ম্বনা পোহাতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও চেম্বারের পর্যটন বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক তাহমিন আহমদ বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপত্তাসহ সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করলে সিলেটের পর্যটন শিল্প বিকশিত হবে, সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে। অবিলম্বে সিলেটকে পর্যটন নগরী ঘোষণা করে এ সংক্রান্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হোক।
সদ্য অতীতে এসব সমস্যা নিয়ে সিলেটের পর্যটনের উন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে পর্যটন উন্নয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক শহিদুল আলম বলন, পর্যটনের স্থান ও সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর সহায়তায় এর সমাধান করাই এ কমিটির মূল্য উদ্দেশ্য। সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ এ সংক্রান্ত সেবা বৃদ্ধিকরা হলে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের রাজস্বও বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।
