
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যে তৃতীয় প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর দেওয়া এই প্রস্তাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিনদের জন্য সরকারি সহায়তার পরিমাণ ও পরিসর বাড়ানো হয়েছে। তবে এই প্যাকেজ সহসাই কার্যকর হচ্ছে না। কার্যকরের জন্য কংগ্রেসের উভয় কক্ষে প্রস্তাবটি পাস হয়ে আসতে হবে। কংগ্রেসের আইনপ্রণেতাদের অনুমোদন নিয়ে এই প্রস্তাবকে আইনে পরিণত হয়ে কার্যকর হতে কম করে হলেও মধ্য ফেব্রুয়ারি পেরিয়ে যাবে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৪ জানুয়ারি নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারের তৃতীয় প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এতে বেকারভাতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এককালীন নাগরিক প্রণোদনার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। করোনা মহামারিতে আর্থিকভাবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিনরা এই প্রস্তাব ঘোষণার পর থেকেই এক ধরনের অপেক্ষার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। কিন্তু বাস্তব হচ্ছে, প্রস্তাব ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই এটি কার্যকর হচ্ছে না। অন্য প্রণোদনা প্রস্তাবগুলোর মতোই একে কংগ্রেসের পর্যালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের উভয় কক্ষে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কারণে মনে হতে পারে যে, বাইডেনের এই প্রস্তাব সহজে পাস হয়ে যাবে। কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়।
এ বিষয়ে আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের আবাসিক গবেষক কেভিন কোসার সিএনএনকে বলেন, বাইডেন যেভাবে প্রস্তাব করেছেন, সেভাবে তা গ্রহণ নাও করতে পারেন আইনপ্রণেতারা। তারপরও খুব দ্রুত সময়ে যদি সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়, তাতেও এটি পাস হয়ে কার্যকর হতে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি হয়ে যাবে। এমনকি ফেব্রুয়ারির শেষ নাগাদও হতে পারে।
বাইডেন প্রস্তাবিত প্রণোদনা প্যাকেজে বেশ কিছু জনপ্রিয় বিষয়কে হাজির করা হয়েছে।1. এর মধ্যে এককালীন প্রণোদনার পরিমাণ বাড়িয়ে ২ হাজার ডলার করার প্রস্তাব করা হয়েছে। 2. সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে পাস হওয়া দ্বিতীয় প্রণোদনা প্যাকেজের এককালীন ৬০০ ডলারের সঙ্গে আরও ১ হাজার ৪০০ ডলার যোগ করা হবে। 3. পাশাপাশি বেকারভাতা বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বাড়তি বরাদ্দ এবং করোনা টিকা দেওয়া ও করোনা পরীক্ষার জন্য যথাক্রমে ২ হাজার ও ৫ হাজার কোটি ডলারের তহবিল রাখার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে। 4. সঙ্গে রয়েছে কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনের প্রস্তাব। 5. এর মধ্যে ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ১৫ ডলার ও ওবামাকেয়ারের প্রিমিয়াম বাবদ ভর্তুকি বৃদ্ধির বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
বাইডেনের এই প্রস্তাব নিঃসন্দেহে মার্কিনদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট প্রস্তাব দিতে পারেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবের পাস হওয়া না–হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে কংগ্রেসের ওপর। বাইডেনের দেওয়া এই প্রস্তাবের গন্তব্য এখন প্রতিনিধি পরিষদ। সেখানে ডেমোক্রেটিক দলের নেতারা এতে পরিবর্তন আনতে পারেন। সব ঘষামাজা শেষে তাঁরা এটি বিল আকারে প্রতিনিধি পরিষদে উপস্থাপন করবেন। তারপর তাঁরা একে সিনেটে পাঠাবেন। সেখানে তাঁরা বিলটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় উপস্থাপন করতে পারেন। আগে থেকে সমঝোতার মাধ্যমে এই বিশেষ প্রক্রিয়ায় বিলটি সিনেটে তোলা হলে, সেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই বিলটি পাস হবে। তা না হলে রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনায় বসতে হবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘায়িত হতে পারে।
এ বিষয়ে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো জন হুডাক বলেন, প্রস্তাবটি কত দ্রুত পাস হবে, তা অর্থনৈতিক শক্তির ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে শ্রমবাজার যদি নিম্নমুখী হয়, তবে কংগ্রেসের পক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।
তবে সাধারণ অনুমান হচ্ছে, প্রস্তাবটি প্রতিনিধি পরিষদে পাস হতে তেমন সময় লাগবে না। কারণ গত বছরের মার্চে এই ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদই ৩ লাখ কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজ পাস করেছিল, যেখানে বাইডেনের প্রস্তাবে স্থান পাওয়া অনেক কিছুই ছিল। প্রতিনিধি পরিষদে এখনো ডেমোক্র্যাটরাই বেশ ভালো ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। ফলে স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাঁর সহকর্মীদের কাছ থেকে এ ক্ষেত্রে সহায়তা পাবেন।
তবে মুশকিল হবে সিনেটে। সেখানে ভাইস প্রেসিডেন্সির জোরে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে সেখানে ডেমোক্র্যাটদের লড়তে হবে বাকি অর্ধেক রিপাবলিকান সিনেটরদের সঙ্গে। একমাত্র সমান-সমান ভোটের ক্ষেত্রেই ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ভোট দিতে পারবেন। এদিকে একই সময়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসনের বিষয়টিও উঠবে সিনেটে।
শুরু হবে অভিশংসন শুনানি। সে ক্ষেত্রে রিপাবলিকান সিনেটররা প্রণোদনার বিলটি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আর বাইডেন এখন পর্যন্ত যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে তিনি রিপাবলিকান সিনেটরদের এড়িয়ে একচেটিয়া ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চান না। তিনি এরই মধ্যে তাঁর ঘোষিত ‘আমেরিকান রেসকিউ প্ল্যান’-এ উভয় দলকে সঙ্গে নেওয়ার কথা বলেছেন। বাইডেন শেষ পর্যন্ত এটা পারেন কিনা, তাই এখন দেখার বিষয়।
