সিলেট নগরের তারাপুর চা-বাগান সংলগ্ন গুয়াবাড়ি এলাকার কালীবাড়িছড়া। একপাশে চা-বাগান, অন্যপাশে জনবসতি। মধ্যখানে টিলার পাদদেশ পুরোটাই ছড়ার উৎসমুখ। ছড়াটি বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। কিছুদিন আগেও ছড়ার উৎসমুখ ছিলো দখল আর দূষণে। সম্প্রতি দখল হটিয়ে ছড়ার তীর সংরক্ষণ করে হাঁটাচলার পথ নির্মাণ করা হয়। সেখানে ভোর সকাল, দুপুর, বিকেলেও চলে হাঁটাহাঁটি। আর নগরের বাসিন্দারা বুকভরা শ্বাস নিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। কারণ, দখল-দূষণ হটিয়ে সেখানে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ) নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকৃতির নির্মল নিশ্বাস নিতে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী প্রতিদিন সেখানে ছুটে যান। এলাকাটি প্রকৃতিপ্রেমীদের আড্ডাস্থল হয়ে ওঠেছে। শুধু কালীবাড়িছড়া নয়, সিলেট সিটি করপোরেশন নগরীর প্রাকৃতিক ছড়া-খাল দখলমুক্ত করে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে।জানা গেছে, নগরের দক্ষিণ-মধ্যভাগ দিয়ে সুরমা নদী প্রবাহিত হয়েছে। উত্তর-পূর্বে চা-বাগানের সবুজ টিলাভূমি। টিলা থেকে প্রাকৃতিকভাবে আসা নয়টি ছড়া এবং তিনটি খাল নগরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা ঘুরে গিয়ে মিশেছে সুরমা নদীতে। সিসিকের আট নম্বর ওয়ার্ডের গুয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত তারাপুর চা-বাগান। বাগান এলাকা থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ‘কালীবাড়িছড়া’টি মিলিত হয়েছে সুরমা নদীতে। সেই ছড়ার উৎসমুখে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটাচলার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াকওয়ে। আরো প্রায় আধা কিলোমিটার এখনো নির্মাণাধীন রয়েছে।সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক সৃষ্ট ছড়াগুলোকে সংরক্ষণ করে পানিপ্রবাহ সচল রাখতে রিটেইনিং ওয়াল, ওয়াকওয়ে নির্মাণে সিসিকের ২শ’ ৩৬ কোটি টাকার কাজ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান রয়েছে। আর এই প্রকল্পের অন্যতম একটি কাজ হচ্ছে দখলমুক্ত ছড়া ও খালের তীর সংরক্ষণ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ।সিসিক সুত্রে জানা গেছে, নগরীর ভেতর দিয়ে প্রবাহমান ১১টি ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩১ কিলোমিটার। ২০১৬ সাল থেকে সবক’টি ছড়া উদ্ধার করে চলমান রয়েছে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ। গুয়াবাড়ি-করেরপাড়া ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কালীবাড়িছড়ায় এক কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। শাহী ঈদগাহ, বালুচর টিবি গেইট ও এমসি কলেজ ৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গোয়ালীছড়ায় ৭০০ মিটার, টিলাগড় এলাকার হাতিম আলী উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন সাড়ে ৪ কিলোমিটারের হলদী ছড়ায় দেড় কিলোমিটার এবং দাঁড়িয়াপাড়া ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মুগলীছড়ায় দেড় কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আর ছড়া উদ্ধারে ১১টি ধাপে জবরদখলের তালিকা তৈরি করে ছড়া-খালের আয়তন নির্ধারণ করতে ১৯৫৬ সালের রেকর্ড অনুসরণ করা হয়েছে। দখলমুক্ত অভিযানও অব্যাহত আছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ চারটি স্থানে ওয়াকওয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। ওয়াকওয়ের সঙ্গে ছড়া-খালের রিটেইনিং ওয়াল (প্রতিরক্ষা দেওয়াল) নির্মাণসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের পাঠানটুলা থেকে গুয়াবাড়ির দূরত্ত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। সেখান থেকে সড়কটি চা-বাগানের ভেতর দিয়ে যুক্ত হয়েছে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে। আর গুয়াবাড়ি উৎসমুখ দখল ও দূষণে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। বাজারের ময়লার স্তুপ ফেলা হতো যে স্থানে, পোষা প্রাণী ও গৃহপালিত পশু মারা গেলে যে স্থানে ফেলা হতো এখন সেই স্থানটি প্রকৃতিপ্রেমীদের নির্মল নিশ্বাস নেওয়ার স্থানে পরিণত হয়েছে। ইটপাথরের যান্ত্রিক জীবনে থাকা লোকজন এখন সময় পেলেই সপরিবারে ছুটে যাচ্ছেন।সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা ছড়া-খাল দখলমুক্ত করে নাগরিকদের হাঁটাচলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করার চিন্তা ভাবনা করছি। করোনা পরিস্থিতিতে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে বেশ বিলম্ব হচ্ছে। তারপরও দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা রয়েছে সিসিকের। ওয়াকওয়েতে রাতে চলাচল করতে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।মেয়র বলেন, যেসব ছড়া-খালে ওয়াকওয়ে আছে, সেখানে খনন করে পানির প্রবাহ বাড়ানো হবে। সেখানে সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থাও রাখা হবে। ও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here